Tuesday, January 26, 2010

তাবলিগ জামাত সম্পর্কে কিছু বিভ্রান্তি ও তার জবাব!!

দাওয়াত ও তাবলিগ: দাওয়াতের অর্থ হলো, আল্লাহর দীনের দিকে মানুষকে আহ্বান করা। আর তাবলিগ হচ্ছে, আল্লাহর বাণী মানুষের কাছে পৌছে দেওয়া।
নবী-রাসূলদের মূল দায়িত্ব ছিল দাওয়াত এবং তাবলিগ। নবুয়তের দরজা বন্ধ হয়ে যাওয়ার পর আম্বিয়া কেরাম (আ.) বা নবীরা যে কাজ করতেন সে কাজের দায়িত্ব পড়ে সমগ্র মুসলিম উম্মাহর ওপর। প্রিয় নবী হজরত মুহাম্মদ (সা.) নির্দেশ দিয়েছেন, তাঁর একটি বাক্য যদি আমাদের কারো জানা থাকে, তা অন্যদের পৌছে দিতে। রাসুল (সা.)-এর এই নির্দেশ পালন করা সব মুসলমানের জন্য জরুরী। তাবলিগ জামাত এ কাজটিই করছে।

আর এই তাবলিগ জামাত বা এর কার্যক্রম সর্ম্পকে কারো কারো কিছু বিভ্রান্তি, ভুল ধারনা বা অজ্ঞতা রয়েছে। তাই এ সর্ম্পকে কিছুটা আলোকপাত করার চেষ্টা করা হল।

প্রশ্ন: তাবলিগের মূল দাওয়াত ছয় উছুলের মাধ্যমে বিন্যস্ত হয়েছে। বিষয়টি ব্যাখ্যা করবেন কি?

উত্তর: তাবলিগের মূল দাওয়াতকে ছয়টি উছুলে (গুন) বিন্যস্ত করা হয়েছে এবং এর মধ্যেই সব কথা সন্নিবেশিত হয়েছে। কেননা রসূলের (সা.) সাহাবীদের আমলে জিন্দেগী পর্যালোচনা করলে এগুলোই পরিস্ফুটিত হয়। সেগুলো হলো কলেমা, নামাজ, একরামুল মুসলিমিন (তথা মুসলমানের সেবা), এলেম ও জিকির, নাফরুন ফি সাবিলিল্লাহ, তাছিহে নিয়্যাত বা সহীহ নিয়্যত। তবে আমাদের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য হলো মানুষের আত্মিক বা ঈমানী পরিবর্তন। মাল ও আমল আল্লাহর জন্যই কেবলমাত্র নিবেদন করা। সবচেয়ে বড় কথা হলো পৃথিবীতে মানুষ সকল কাজ বুঝে করে আর একমাত্র দাওয়াতে তাবলিগের মেহনত মানুষ করে বুঝতে পারে।

প্রশ্ন: তাবলিগের চিল্লা পদ্ধতি কি ইসলামী শরীয়াতে সম্মত? পরিবার-পরিজন থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে চিল্লায় ঘুরে বেড়ানোর উদাহরণ ইসলামে কিভাবে এসেছে?

উত্তর: তাবলিগের চিল্লা পদ্ধতি ইসলামী শরীয়াতে অবৈধ কিছু নয়। ইসলামে এর অনেক উদাহরণ রয়েছে। যেমন শিক্ষা গ্রহণ করার জন্য মাদ্রাসার বিভিন্ন ক্লাসের সময় নির্দিষ্ট করা হয়ে থাকে। তাছাড়া তাবলিগের চল্লিশদিনের সময়টি আমরা বরকতপূর্ণ মনে করে থাকি। কারণ আমাদের জন্ম প্রক্রিয়ার বিভিন্ন পর্যায়ে যেমন, রক্ত অবস্থায় চল্লিশ দিন থাকে। এই চল্লিশদিন পর গোশতের টুকরায় পরিণত হয়। এর চল্লিশদিন পর হাড্ডি সঞ্চার করা হয়। তার চল্লিশদিন পর তাতে চামড়ার আবরণ দিয়ে ঢেকে দেয়া হয়। তাছাড়াও এই চল্লিশদিনের উদাহরণ অন্য প্রেক্ষাপটে আছে যেমন: হযরত ইব্রাহিম (আ.) চল্লিশদিন অগ্নিকুন্ডের মধ্যে শান্তিতে ছিলেন। হযরত মুসা (আ.) চল্লিশদিন তুর পাহাড়ে ছিলেন। হযরত ইউনুস (আ.) চল্লিশদিন মাছের পেটে ছিলেন। হযরত ইউসুফ (আ.) চল্লিশদিন কুয়ার মধ্যে ছিলেন। এ সমস্ত কারণে আমরা উক্ত সংখ্যাটিকে বরকতপূর্ণ মনে করে থাকি। তবে আমরা তাবলিগের কাজে ৩/৭/১০/৪০/৬০/১২০ দিনও বের হই।
আর পরিবার-পরিজন থেকে বিছিন্ন হয়ে চিল্লায় ঘুরার বিষয়টি সম্পর্কে বলতে চাই, আমাদের কেউ বিচ্ছিন্ন থাকে না বরং সবাই পরিবারের খোঁজ খবর নেন। যোগযোগ রাখেন। তাছাড়া যারা মুসলমান তাদের এই বিশ্বাস রাখা উচিত, যে ব্যক্তি আল্লাহর পথে বের হয় আল্লাহ তায়ালা তার কুদরতি ফেরেশতা দ্বারা তাদের হেফাজত করেন।

প্রশ্ন: কোরআনে বলা হয়েছে নিজে জাহান্নামের আগুন থেকে বাঁচ এবং আহল পরিবার পরিজনদেরকে বাঁচাও। অথচ নিজে পরিবার ও আহলদেরকে পরিশুদ্ধ না করে দেশের বিভিন্ন এলাকা ও বিদেশে তাবলিগে যাওয়া কতটুকু শরীয়াত সম্মত?

উত্তর: একথা ঠিক যে আগে নিজে সংশোধন হতে হবে তার পর পরিবার ঠিক করতে হবে। এর পর আহলদেরকে। কিন্তু এরা সকলেই সংশোধন না হলেও আমরা বাইরে যাই তার কারণ হলো নিজের আত্মিক উন্নতি ও দ্বীন শিক্ষার জন্য। বাইরে না গেলে কোন ব্যক্তির রুহানী পরিবর্তন সম্ভব নয়। দ্বীন শিখতে হলে ঘর ছাড়তে হবে। সকল নবী রাসূলেরা এই কাজ করে গেছেন। আমাদের প্রিয় নবী (সা.) নবুওয়াতের পূর্বে দীর্ঘদিন যাবত হিরা গুহায় মেহনত করেছিলেন কিভাবে জাতিকে তাওহিদমুখী করা যায়। তার পর আল্লাহ তাকে নব্যুওয়াতের মত মর্যাদাকর সার্টিফিকেট প্রদান করেন। সুতরাং মেহনত ছাড়া এই পৃথিবীতে কোন কিছুই সম্ভব নয়।

প্রশ্ন: আপনারা কি ধরনের জিকির করেন?

উত্তর: আফজাল জিকির হলো কুরআন তেলাওয়াত। সেটা আমরা করে থাকি। তাছাড়া সকাল-বিকাল তিন তসবীহ পড়ি। একশতবার সুবহানাল্লাহ, আলহামদুলিল্লাহ, আল্লাহু আকবার। একশতবার তওবা আসতাগফের ও একশতবার দূরূদে ইব্রাহিম। তাছাড়া চব্বিশ ঘন্টাই আমরা সকল স্থানের প্রয়োজনীয় সব দোয়া পড়ি।

প্রশ্ন: অনেকে বলে থাকেন তাবলিগের মধ্যে ব্যাপক ভাবে কুরআনের তাফছীর, হাদীস ও ইসলামী গ্রন্থ পড়তে দেয়া হয় না। বরং কেবলমাত্র ফাযায়েলের উপর কিছু নির্দিষ্ট কিতাব পড়তে দেয়া হয়। সে ব্যাপারে আপনাদের বক্তব্য কি?

উত্তর: এ কথা সঠিক নয়। আমাদের মধ্যে কুরআন এর তাফছীর পড়াতে কোন নিষেধ নেই। হাদীস পড়তে কোন নিষেধ নেই। ইসলামী গ্রন্থ পড়তে নিষেধ নেই। তবে যে লোকটি এখনো অ, আ, ক, খ পড়তে শিখেনি। তাকে যদি একটি সাহিত্য গ্রন্থ দেয়া হয় তাহলে সেতো পড়তে পারবে না বরং তাকে দিতে হবে একটি আদর্শলিপি। যাতে সে পড়া শিখতে পারে। তদ্রুপ আমাদের জামায়াতে যে সমস্ত ভাইয়েরা আসেন তারা যাতে দ্বীনের জ্ঞান অর্জনের পড়া শিখতে পারে তার জন্য সে অনুযায়ী ফাযায়েলে আমল, ফাযায়েলে সাদাকাত, মুন্তাখাব হাদীস, হায়াতুস সাহাবা ইত্যাদি গ্রন্থ পড়তে দেয়া হয়। ফাযায়েল অর্থ হলো লাভ। মানুষ যে জিনিসে লাভ দেখে তা পাওয়ার জন্য জীবনও দিয়ে দেয়। সে জন্য তাবলিগের ভাইদের দ্বীনের জ্ঞান চর্চায় উদ্বুদ্ধ করার লক্ষ্যে এই ধরনের গ্রন্থ গুলো আগে পড়তে উৎসাহিত করা হয়।

প্রশ্ন: আপনাদের এই সমস্ত ফাযায়েলের কিতাবগুলোতে অসংখ্য কল্প-কাহিনী, দুর্বল হাদীস দিয়ে নাকি ভরা এই বিষয়টি বিশ্লেষণ করবেন কি?

উত্তর: আমাদের ফাযায়েলের কিতাব গুলোতে কোন কল্প-কাহিনী বা রূপকথা নেই। যা কিছু আছে তা সবই কুরআন, সহীহ হাদীস ও আমাদের মুরুব্বিদের বাস্তব অভিজ্ঞতার কথা। এই সমস্ত গ্রন্থে যদি অসার কথা থাকতো তাহলে তাবলিগের কাজ দিনে দিনে এত প্রসারিত হতো না। সত্যের হাকিকত হলো সে প্রসারিত হবেই। আলোকিত ব্যক্তি, পরিবার, সমাজ, দেশ ও বিশ্বগঠনের রুহানী কথাগুলোই আমাদের গ্রন্থসমুহে বিদ্যমান।

প্রশ্ন: নেতৃত্বের পরিবর্তন সম্পর্কে আপনাদের অভিমত কি?


উত্তর: তাবলিগ গতানুগতিক কোন দল নয় এবং কোন দলেরও নয়। প্রচলিত কোন রাজনীতি আমরা করি না। তবে আমরা কিন্তু রাজনীতি করি। রাজনীতি যেহেতু রাজার নীতি সে হিসাবে আমরা সকল রাজার রাজা যিনি তার নীতি অনুযায়ী চলি বিধায় আমরা আল্লাহর রাজনীতি করি। তাছাড়া আমরা চাই ঈমানদার মানুষেরা শাসন ক্ষমতায় আসুক, সৎ নেতৃত্ব ও গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠিত হোক, ইসলাম কায়েম হোক। ফজর এবং এশার নামাজে জুমআর মত মসজিদগুলো ভরে যাক। আমরা কেবল দোয়া আর দোয়াই করে যাচ্ছি মেহনতের সাথে। আল্লাহতায়ালা একদিন আমাদের মেহনত ও দোয়ার বরকতে আমাদের রাষ্ট্রে ও পুরা পৃথিবীতে হেদায়েতের হাওয়াকে ছড়িয়ে দিবেন, ইনশা আল্লাহ।

প্রশ্ন: আপনাদের মধ্যে অন্যায়ের প্রতিবাদমূলক কোন কাজ করতে কেন দেখা যায় না?

উত্তর: অন্যায় ও খারাপ আলোচনা ও সমালোচনা যত করা হবে তা তত বেশি দেশে-বিদেশে ছড়িয়ে পড়বে। প্রতিবাদ আমরা নিজেদের সাথে করি। দুনিয়ায় আজ যা হচ্ছে সে ব্যাপারে আমরা মনে করি সবই আমার গোনাহের কারণে হচ্ছে। যে কারণে এসব অন্যায় হচ্ছে। যারা করছেন তাদের পরিবর্তনের জন্য আমরা দোয়া ও মেহনত করছি এবং শেষ রাতেও দোয়া করছি। হাত দ্বারা প্রতিবাদের ব্যাপারে বক্তব্য হলো আমরা হকের মেহনত করে যাচ্ছি। ইনশা আল্লাহ বাতিল শীঘ্রই চলে যাবে। যেমন অন্ধকারের বিরুদ্ধে জিহাদ করতে হয় না। বরং মেহনত করে সুইচ অন করলেই অন্ধকার চলে যায়। সূর্যের আলো ছড়িয়ে পড়লে অন্ধকার বিদূরিত হয়। তেমনি আমাদের দাওয়াতে একদিন আলোকিত পৃথিবী প্রতিষ্ঠিত হবে। তখন সে আলো থেকে আড়ালে থাকার কেউ থাকবে না।

প্রশ্ন: ইসলামে কোন বৈরাগ্যবাদ নেই। কিন্তু বাড়ীঘর, সমাজ সংসার ছেড়ে যেভাবে আপনাদের কর্মকাণ্ড চলছে তাতে বিষয়টি কি বৈরাগ্যের মত মনে হয় না?

উত্তর: তাবলিগের মেহনত কোন বৈরাগীর মেহনত নয়। তাবিলগ করতে হলে বাড়ি-ঘর, চাকরি-বাকরি, ব্যাবসা-বাণিজ্য চিরদিনের জন্য ত্যাগ করে বনে-জঙ্গলে চলে যেতে হবে এমন নয়। বরং আমরা তো বলি ভাল ছাত্র ভাল রেজাল্ট করবেই। যে সৎ ব্যবসায়ী সে ধনী হবে। তেমনিভাবে যে আল্লাহর জন্য নিজেকে উৎসর্গ করবে সে আল্লাহরই হয়ে যাবে। তখন আল্লাহ তাকে যেভাবে চালাবেন সেভাবেই সে চলবে। সে হবে অন্যান্য মানুষ হতে পরিপূর্ণ ভিন্ন একটি মানুষ। তাই বাড়ি-ঘর চিরদিনের জন্য ত্যাগ করে বনে-জঙ্গলে চলে যাওয়া নয় বরং কিছুদিনের জন্য মসজিদওয়ালা পরিবেশে থেকে সবচেয়ে বড় দ্বীনদার হয়ে যাওয়া তখন তার একমাত্র লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য হয়ে যায়।

প্রশ্ন: তাবলিগের ইজতেমাকে অনেকে হজ্বের সাথে তুলনা করেন। এ ব্যাপারে কিছু বলবেন?

উত্তর: তাবলিগের ইজতেমাকে হজ্বের সাথে তুলনা করা সম্পূর্ণ অন্যায়। কারণ হজ্ব হলো একটি ফরজ ইবাদত। যা না করলে গোনাহগার হতে হয়। কিন্তু তাবলিগের ইজতেমায় আসা ফরজ নয় এবং না আসলে গোনাহগারও হতে হবে না। দুটি বিষয় সম্পূর্ণ ভিন্ন। যার একটির সাথে অন্যটির কখনোই তুলনা করা চলে না। হজ্বের মত লোক সমাগম হলেই সেটাকে দ্বিতীয় হজ্ব বলা সমীচীন নয়। সবচেয়ে বড় কথা হলো তাবলিগের পক্ষ থেকে এধরনের কোন কথা কখনোই বলা হয় না। তবে কোন সাধারণ মুসল্লি যদি এমন কথা বলে থাকেন তাহলে সেটা একান্তই তার ব্যক্তিগত ব্যাপার।

প্রশ্ন: আপনাদের ফান্ড কি এবং কোথা হতে আসে?

উত্তর: আমাদের ফান্ড হলো আল্লাহ তায়ালার খাজানা বা ভান্ডার। যেহেতু আমাদের মেহনত হচ্ছে নিজের জান ও মাল দিয়ে। সেহেতু সব উম্মতের পকেটেই আমাদের ফান্ড। সুতরাং যে আসবে সে নিজের টাকা খরচ করে খাবে।

আপনারা শুনে অবাক হবেন যে, প্রতি বছর ইজতেমায় লক্ষ লক্ষ মানুষের সমাগম ও কাকরাইল মসজিদে দেশী-বিদেশী মেহমানদের খেদমতের ইন্তেজাম আল্লাহ তায়ালার অশেষ অনুগ্রহে সম্ভব হয়। কারণ আমরা বিশ্বাস করি মানুষের কাছে চাওয়া হলো ভিক্ষা। আর আল্লাহর কাছে চাওয়া হলো দোয়া। মানুষের কাছে চাইলে মানুষ রাগ করেন। আর আল্লাহর কাছে না চাইলে আল্লাহ রাগ করেন। সুতরাং যার কাছে চাইলে ইন্তেজাম হবে তার কাছেই আমরা চাই। সবারই উচিত তাঁর কাছে চাওয়া।

প্রশ্ন: আপনাদের দপ্তর বা অফিস কোথায়?

উত্তর: পৃথিবীর সমস্ত উম্মতের দিল বা হৃদয়ই আমাদের দপ্তর। তবে কাকরাইল মসজিদ আমাদের মারকাজ হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে।

প্রশ্ন: তাবলিগ কেন নিরপেক্ষতা অবলম্বন করে?

উত্তর: যেহেতু আমরা আসমানের উপরের কথা বলি আর জমিনের নীচের কথা বলি সেহেতু আমাদের সাথে কারো বিরোধ নেই এবং আমরা কারো পক্ষাবলম্বনও করি না। যত গন্ডগোল হলো জমিনের উপরের নানাবিধ বিষয় নিয়ে। তাই আমরা কোন গন্ডগোলে নেই। আমাদের সাথেও কেউ গন্ডগোল করতে আসেনা।

প্রশ্ন: আখেরী মুনাজাত সম্পর্কে বলুন। পৃথিবীর কোথাও কি এধরনের মুনাজাত হয়?

উত্তর: ইজতেমার ২৫/৩০ মিনিটের আখেরি মুনাজাত আমাদের নীতিগত বিষয়ের সাথে সম্পৃক্ত নয়। যেহেতু বৃহৎ মজমা এবং মজমার অধিকাংশ মানুষ মুসাফির আর মুসাফিরের দোয়া কবুল হয়। তাছাড়া দেশের প্রধান প্রধান ব্যক্তিদের উপস্থিতি ও মজমার সামগ্রিক বিবেচনায় দীর্ঘ আখেরী মুনাজাত করা হয়। যেখানে দেশ, জাতি ও সমগ্র মুসলিম উম্মাহর শান্তি কামনা করা হয়। যেহেতু সবার কথাই মুনাজাতে বলা হয়। সেহেতু সকল পেশার মানুষ আখেরী মুনাজাতে শরীক হওয়ায় এর গুরুত্ব বৃদ্ধি পেয়েছে।

তাবলীগ জামাত সম্পর্কে বিভিন্ন অপপ্রচারের জবাব জানতে নিচের গ্রন্থগুলো পড়ুন।

০১। তাবলিগ জামাতের সমালোচনা ও জবাব। (৬ মেগা)
-লেখকঃ শায়খুল হাদীস মাওলানা যাকারিয়া সাহেব।
০২। তাবলীগ জামাতঃ ভিত্তিহীন অভিযোগ ও জবাব। (১.৬ মেগা)
-লেখকঃ মাওলানা মনজূর নোমাণী।
০৩। তাবলিগের প্রশ্নোত্তর। (৩.১৮ মেগা)
- শায়খুল হাদীস মাওলানা শওকত আলী।

তথ্যসূত্র কৃতজ্ঞতায়ঃ
০১। ড. কাজী এরতেজা হাসান, কেন্দ্রীয় তাবলিগ জামায়াতের সদস্য।
০২। মাওলানা জাকির হোসাইন আজাদী, দৈনিক ইত্তেফাক
০৩। বাংলাকিতাব.কম ও অন্যান্য।

Saturday, January 16, 2010

প্রচলিত ভুলঃ বিদায়ের সময় 'খোদা হাফেজ' বলা কি ঠিক? বিদায়ের সময়ের সুন্নত আমল কী?

আমাদের দেশে অনেককেই দেখা যায় তারা বিদায়ের সময় বা চলে যাওয়ার সময় খোদা হাফেজ বা আল্লাহ হাফেজ বলে থাকেন। বিদায়ের সময় এটা বলা কি ঠিক? বিদায়ের সময়ের সুন্নত আমল কী?

-সাক্ষাতের সময় যেমন সালাম দেয়া সুন্নত, তেমনি বিদায়ের সময়েও সালাম দিয়ে বিদায় নেওয়া সুন্নত। এ সম্পর্কে একাধিক হাদীস আছে। যেমন হযরত আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন- ''যখন তোমাদের কেউ কোন মজলিসে পৌছবে, তখন সালাম দিবে। যদি অনুমতি পাওয়া যায়, তবে বসে পড়বে। এরপর যখন মজলিস ত্যাগ করবে তখনও সালাম দিবে। কারণ প্রথম সালাম দ্বিতীয় সালম অপেক্ষা অধিক গুরুত্বপূর্ণ নয়। অর্থাৎ উভয়টির গুরুত্ব সমান।”''
-জামে তিরমিযী ২/১০০

সুতরাং বিদায়ের সময়ও ইসলামের আদর্শ এবং সুন্নত হল সালাম দেয়া। তাই সালামের স্হলে বা এর বিকল্প হিসাবে 'খোদা হাফেজ বা আল্লাহ হাফেজ' বা এ জাতীয় কোন কিছু বলা যাবে না। অবশ্য সালামের আগে পৃথক ভাবে দুআ হিসাবে 'খোদা হাফেজ বা আল্লাহ হাফেজ' বলা দোষের কিছু নয়।

আরও দেখা যেতে পারে শুআবুল ঈমান ৬/৪৪৮; সুনানে আবু দাউদ ১৩/৭০৭; মিন আদাবিল ইসলাম, শায়খ আব্দুল ফাত্তাহ আবু গুদ্দাহ রহঃ ১৩; ইমদাদুল ফাতওয়া ৪/৪৯১; মাসিক আলকাউসার , মার্চ-২০০৫ পৃষ্ঠা-২৮।

একটি ভুল ধারণাঃ বিতরের নামাজের দুআয়ে কুনুত কি শুধুই 'আল্লাহুম্মা ইন্না নাস্তাঈনুকা......' ??

বিতরের নামাজে তৃতীয় রাকাতে কুনূত (কুনূতের দুআ) পড়া জরুরী। এর বিভিন্ন দুআ রয়েছে। একটি হচ্ছে “”'আল্লাহুম্মা ইন্না নাস্তাঈনুকা......' আরেকটি হচ্ছে 'আল্লাহুম্মাহদীনি ফীমান হাদাইত্......' এবং এ ধরনের আরো দুআ রয়েছে। বিতরের নামাজে এর যেকোন একটি দুআ পড়া যায়। বরং কুরআন-হাদীসের যেকোন দুআ পড়ার দ্বারাও কুনূতের ওয়াজিব আদায় হয়ে যাবে। কেউ কেউ প্রথম দুয়াটিকেই একমাত্র দুআ মনে করে। তাদের ধারনা এই দুআ ছাড়া কুনূত আদায় হয় না। এই ধারনা ঠিক নয়। যেকোন মা'ছুর বা মাসনুন দুয়ার দ্বারা ওয়াজিব আদায় হয়ে যায়।

সূত্রঃ মাসিক আলকাউসার , মার্চ-২০০৯, পৃষ্ঠা-৩০।

প্রচলিত ভুলঃ সালাম ও মুসাফাহা!

০১। বিভিন্ন সভা-সমাবেশে বক্তৃতা করার ক্ষেত্রে দেখা যায় বক্তাগণ মাইকের সামনে দাড়িয়ে সূদীর্ঘ বন্দনার অবতারনা করার পর সালাম দেন। এ রীতিটি ভুল। যেমন বলে থাকেন, 'মন্চে উপবিষ্ট শ্রদ্ধেয় সভাপতি, মাননীয় পরিচালক, মান্যগণ্য অমুক অমুক সাহেব ও আমার শ্রোতা বন্ধুরা, 'আসসালামু আলাইকুম।'

কিন্তু নিয়ম হল শ্রোতাদের মুখোমুখি হওয়ার সাথে সাথে সালাম দেওয়া। সাক্ষাতের নিয়মাবলির ক্ষেত্রে সর্বপ্রথম সালামের কথাই বলা হয়েছে।


০২। দুজন মহিলার পরষ্পর সাক্ষাতে সালাম ও মুসাফাহা করার বিধান আছে কি?

-সালাম মুসাফার বিধান শুধু পুরুষের জন্য নয়। এগুলো যেমন দুজন পুরুষের পরস্পর সাক্ষাতের সময় সুন্নত, তেমনি দুজন মহিলার বেলায়ও সুন্নত।

সহীহ বুখারী ২/৯১৯, ২/৯২৬; ফাতহুল বারী ১১/৫৭; আদ্দুরুল মুখতার ৬/৩৬৮।

একটি ভুল ধারণাঃ ৭৮৬ কি বিসমিল্লাহ'র বিকল্প!!

যেসব ক্ষেত্রে "বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহীম" লেখা মাসনূন বা মুস্তাহাব সেসব ক্ষেত্রে অনেকেই "৭৮৬" লিখে থাকে। আবজাদের হিসাবে এটা "বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহীম" এর অক্ষরগুলোর সংখ্যামানের সমষ্টি। কারো কারো ধারনা আছে যে, এই সংখ্যাগুলো লিখলে বা উচ্চারণ করলে "বিসমিল্লাহ" লেখার বা বলার কাজ হয়ে যাবে। এটা একটি ভুল ধারণা। মুখে "বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহীম" পাঠ করে যদি এই অংকগুলো লেখা হয় তাহলে সেটা "বিসমিল্লাহ"র চিহ্ন গণ্য করা যেতে পারে। কিন্তু সরাসরি এই অংকটাকে "বিসমিল্লাহ"র বিকল্প মনে করা সম্পূর্ণ ভুল।

বলা বাহুল্য যে, একটি 'সুন্নাতে মুতাওয়ারাছা' যা সর্বযুগের ওলামা-মাশায়েখ ও দ্বীনদার ব্যক্তিদের অনুসৃত ছিল তা বাদ দিয়ে শুধু আবজাদী অংক লেখা কোনভাবেই গ্রহণযোগ্য হতে পারে না।

সূত্রঃ মাসিক আলকাউসার, ফেব্রুয়ারী ০৯।

Monday, January 11, 2010

প্রচলিত ভুলঃ ‘বিসমিল্লাহ ’ও ‘দরূদ’ অশুদ্ধ বা অসম্পূর্ণ বলা ও লেখা!!

প্রত্যেক গুরুত্বপূর্ণ কাজের শুরুতে ‘আল্লাহর যিকর’ মাসনূন। যে কাজের সূচনায় শরীয়ত যে যিকর নির্দেশ করেছে সে কাজের জন্য ঐ যিকরই মাসনূন। অনেক কাজে ‘বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহীম’ বলা বা লেখার নির্দেশনা রয়েছে। শরীয়তে তা মাসনূন। বিধানগত বিচারে এটা মাসনূন বা মুস্তাহাব হলেও এর তাৎপর্য অত্যন্ত গভীর। সংক্ষেপে বলা যায় যে, এর দ্বারা বান্দা নতুন করে এর অঙ্গিকার। আল্লাহ তাআলার নেয়ামত সমূস স্মরণ করে এবং আল্লাহর দিকে রুজূ করে কাজের মধ্যে দুরুসী ও খায়র ও বরকতের দরখাস্ত করে। এজন্য এই আমল গুরুত্বের সঙ্গে করা চাই। আর যেহেতু এতে মাহবূবে হাকীকী আল্লাহ রাব্বুল আলামীনের পবিত্র নাম রয়েছে তাই গভীর শ্রদ্ধা ও মহাব্বতের সঙ্গে তা আদায় করা চাই। পূর্ণ বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহীম তাজবীদ ও ইখলাসের সঙ্গে পাঠ করা চাই, শুধু রসম পুরা করার জন্য না হওয়া চাই। পরিতাপের বিষয় এই যে, আমাদের মধ্যে অনেককে অনেক সময় দেখা যায়, যারা বিসমিল্লাহ এমনভাবে পাঠ করে থাকেন, যেন তা একটি অতিরিক্ত কাজ। মূল কাজ হল যা শুরু করা হচ্ছে। বলাবাহুল্য, যারা এমন মনে করেন তারা এই সুন্নতের তাৎপর্য সম্পর্কে সচেতন নন। বিসমিল্লাহকে মূল কাজের মতো গুরুত্ব দিয়ে পাঠ করা উচিত; বরং কোনো দুনিয়াবী কাজের শুরুতে যদি ‘বিসমিল্লাহ’ পড়া হয় তাহলে তা ওই কাজের চেয়েও গুরুত্বপূর্ণ। ‘আররহীম’ শব্দে ওয়াকফের কারণে দীর্ঘ মদ করতে হবে। কিন' যদি এক আলিফ মদও না করা হয় তবে তা হবে ‘লাহনে জলী’। তদ্রূপ ‘আররাহমান’-এর মীমে এক আলিফ ‘মদ’ করা জরুরি। অক্ষরগুলো মাখরাজ থেকে আদায় করা, বিশেষত ও সঠিক মাখরাজ থেকে আদায় করাও জরুরি। দরূদ শরীফও অত্যন- বরকতপূর্ণ আমল। দুআর বিভিন্ন প্রকারের মধ্যে দরূদ শরীফ অত্যন- গুরুত্বপূর্ণ। এদিক থেকে তা আল্লাহ তাআলার ইবাদত। দ্বিতীয়ত এর সম্পর্ক রাসূলে কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সঙ্গে, যাঁর হক মুসলমানদের উপর তাদের প্রাণের চেয়েও বেশি এবং যিনি আল্লাহ তাআলার পরে আল্লাহর বান্দাদের প্রতি সর্বাধিক অনুগ্রহকারী। দরূদের মাধ্যমে তাঁর জন্য আল্লাহর দরবারে দুআ করা হয়। তাই এই আমল অত্যন্ত ভক্তি ও অনুরাগের সঙ্গে আদায় করা উচিত। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর উল্লেখ এক মজলিসে বারবার হলে মাসআলাগত দিক থেকে যদিও প্রতিবার দরূদ পড়া জরুরি নয়, মুস্তাহাব, কিন্তু এখানে বিষয়টি মহব্বতের। এজন্য মাশাআল্লাহ-মুসলিম উম্মাহ এই মুস্তাহাব আমলের বিষয়ে যত্নবান, কিন্তু এরপরও আমাদের মধ্যে কেউ কেউ কখনো কখনো উদাসীনতার শিকার হয়ে যায়। কেউ ‘সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম’ এমনভাবে পাঠ করে, যেন তা একটি অতিরিক্ত বিষয়, এজন্য এত দ্রূত ও অস্পষ্টভাবে তা পাঠ করা হয় যে, কিছু অক্ষর সঠিকভাবে উচ্চারিতই হয় না। এটা ঠিক নয়। দরূদকেও একটি গুরুত্বপূর্ণ আমল মনে করে আদায় করা উচিত। লেখার মধ্যে তো দরূদ শরীফকে খুবই মাজলূম বানানো হয়। কেউ শুধু (স.) লেখেন, কেউ লেখেন (দ.)। যেন এটা শুধু ‘অতিরিক্ত’ বিষয়ই নয়, একটি ‘বিপদ’ও বটে। ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন!! প্রশ্ন এই যে, সম্পূর্ণ দরূদ লেখা হলে কতটুকু কালি বা কাগজ ব্যয় হবে? আহা! আমরা যদি উপলব্ধি করতে পারতাম যে, এই ব্যয়টুকুই হতে পারে আমাদের সঞ্চয়। আমাদের দেশের এমন একজন আলেমে দ্বীনের নাম আমার জানা আছে, যিনি শুধু এজন্য কোনো প্রকাশককে তার কিতাব ছাপতে নিষেধ করে দিয়েছিলেন যে, তারা পূর্ণ দরূদের পরিবর্তে শুধু (দ: ) ব্যবহার করতে চেয়েছিল। বলাবাহুল্য যে, এমন ব্যক্তিরাই হলেন আমাদের জন্য অনুসরণীয়।

সূত্রঃ মাসিক আলকাউসার। গবেষণামূলক উচ্চতর শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান মারকাযুদ্ দাওয়াহ আলইসলামিয়া ঢাকা-এর মুখপত্র।